স্কুল কলেজগুলো ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের হাতের মুঠোতে বন্দি

মাদরাসা পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে হেরে এক ইমামের মাথায় মল-মূত্র ঢেলে লাঞ্ছিত করেছে পরাজিত প্রার্থী ও তার লোকজন। ঘটনাটা ঘটে বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে। ঘটনাটা আমার গ্রামে না হলেও আমার থানাতেই।
.
আমি যখন প্রাইমারী স্কুলে পড়ি, তখন বিদ্যা উৎসাহী ছিলেন একজন ব-কলম।

আবার হাইস্কুলে ম্যানিজিং কমিটির অনেক সদস্যকে দেখেছি, যারা হাইস্কুলের গন্ডি পাড় হতে পারেনি। মানে সিক্সে ভর্তি হয়ে নাইন, টেন। আর টেন..... মেট্রিক পরীক্ষা দিলেও টেন, না দিলেন টেন। মানে টেনেটুনে কোনরকম টিকে থাকা। অতিক্রম করা আর হয়নি। পরবর্তীতে বয়স বাড়ছে, ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে, এখন আবার স্কুল টানছে। মানে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। একজন হাইস্কুলের গন্ডি পার না হওয়া লোক যখন একজন এম.এ পাশ করা শিক্ষককে পড়ানোর বিষয়ে পরামর্শ দেন, তখন খুব অবাক লাগে।
.
বাবা ছিলেন শিক্ষক, যে কারণে স্কুল কলেজের এই দিকগুলোর সাথে খুব ভালো ভাবে পরিচিত। একবার এক স্কুলে কোন এক সাবজেক্টের শিক্ষক না থাকায় এলাকা থেকে একজন কে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে নেয়ার জন্য বন্দোবস্ত হচ্ছিলো। যে ছেলেটা নিয়োগের জন্য আবেদন করে সে এম.এ পাশ। তার যোগ্যতা ও দক্ষতা সম্পর্কে আমার খুব ভালো ধারনা, কেননা কোন দিক দিয়েই তার ঘাটতি ছিলো না। সে যখন আবেদন নিয়ে স্কুলে যায়, কথাবার্তার শেষে সবকিছু চুড়ান্ত হয়ে যায়। কিন্তু বাঁধ হলে ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য। বললেন-
এভাবে বললেই তো হবে না, উনি যে পড়াতে পারেন এতটা তো সরাসরি দেখতে হবে। উনি এখন ক্লাশে যাবেন, আমরা দেখবো। যদি পড়াতে পারেন তাহলেই চাকরি পাবেন।
.
এ হচ্ছে অবস্থা, একজন এইট পাশের লোকের কাছ থেকে চাকরী কনফর্ম করতে হচ্ছে এম.এ পাশ করা লোকের। স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে একটা বড় হাত থাকে ইউনিয়নের সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক লোকদের। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পক্ষের লোক, বিরোধী দলের লোক, আওয়ামীলীগ বিএনপি জাতীয়পার্টির ইউনিয়ন সভাপতির পছন্দের লোকজন তো আছেই।
.
একবার স্কুলে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানে কুরাআন তিলাওয়াত পাঠ প্রতিযোগীতায় বিচারক দেখছিলাম এক সদস্যকে। যিনি অনুষ্ঠানে ঢুকার আগে বিড়ি টানতে টানতে ঢুকছে, আবার বেরও হবেন বিড়ি টানতে টানতে। অথচ স্কুলে দুইজন আলেম শিক্ষক ছিলেন, তাদের এই দায়িত্ব দেয়া হয়নি। আমার মনে হয়নি তিনি কখনো কুরআন পড়েছেন। বক্তিৃতার বিচারক তিন জনের একজন ছিলেন শিক্ষক, বাকী দুইজন ম্যানেজিং কমিটির। যারা মনে হয় না, এটা প্রশ্ন করলে মার্জিত ভাষায় উত্তর দিতে পারবেন, বক্তিৃতা তো পরের কথা।
স্কুলের সব বিষয়ে এরা নাক গলিয়ে থাকেন।
আমি টু ক্লাশ পাশ করা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যকে প্রাইমারী স্কুলের হেডমাষ্টারের টেবিলে থাপ্পর মেরে কথা বলতে দেখছি। ফোর পাশ করা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কে শিক্ষকদের তুই তুই করে বলতে শুনিছে, আরও বলতে শুনিছি-
আমি স্কুলে সভাপতি, আমি যখন শিক্ষক রুমে ঢুকবো, সবই দাড়িয়ে সালাম দিবেন।
ভুল শুনেন নি, একজন মুর্খ সভাপতি যখন টিচার রুমে ঢুকতো, তখন সকল শিক্ষক দাড়িয়ে তাকে সালাম জানাতেন।
.
শিক্ষকটা প্রতিবাদ করতে পারতে না, কেননা শিক্ষকরা এই মুর্খদের কাছে বন্দি। তারা যে এই মুর্খদের ভয় পান তা কিন্তু না, ভয় পান মুর্খদের নেতাদের। যাদের ভরসায় এরা স্কুলে এসে শিক্ষকদের সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করতে পারেন।