মুভি রিভিউ (ডুব), Doob: No Bed of Roses

বাবা বলতেন মানুষ কেন মারা যায় জানো?
"যখন তার কাছে পৃথিবীর প্রয়োজন কিংবা পৃথিবীর কাছে তার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়, তখনই সে মারা যায়।"
একারনেই বাবাকে কোন কথা পুরোপুরি ভাবে বলতাম না, আগামীকালের জন্য কিছু কথা বাকী রেখে দিতাম।

ডুব সিনেমা শুরু হওয়ার বেশ কিছুক্ষন পরেই এরকম একটা কথা কানে আসে। আর স্ক্রিনে জানালার ফাঁকে কোন লেক বা নদীর ভিডিওচিত্র ভাসতে থাকে।

আমার বাঙ্গালীরা সবসময়ই দুই ভাবে বিভক্ত। ফুটবল কিংবা ক্রিকেট, সাকিব কিংবা মেসি ইস্যু বলেন, আর আহমেদ ফয়সালের এই পোষ্ট বলেন, আমাদের দুই ভাগ হতেই হবে। আজ যদি আমি ডুবের রিভিউ তে ভালো বলি তাহলে একশ্রেনী আমাকে ফারুকীর দালাল বলবে, আবার খারাপ রিভিউ দিলে বলা হবে- আর্ট ফিল্ম না বুঝলে সিনেমা হলে যান কেন? বাসায় বসে মারুফের কালা বন্দুক দেখেন।
.
কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলো।
ইরফানন খান (জাভেদ, সিনেমার মূল চরিত্র)
তিশা (সাবেরী, জাভেদের মেয়ে)
রোকেয়া প্রাচী (মায়া, জাভেদের প্রথম বউ, সাবেরী চরিত্রের মা)
পার্ণ মিত্র (নিতু, জাভেদের ছোট বউ, সাবেরী চরিত্রের বান্ধবী ছিলো)
.
সিনেমার শুরুর দিকে তিশাকে আর পার্ণ মিত্রকে দেখানো হয়, সেটা ছিলো কলেজের রি-ইউনিয়ন। দুজনই একটা সময় কলেজে আলোচিত ছিলো। রিইউনিয়নে তিশা পার্ণ মিত্রের কাছে হার মেয়ে যায়, যে কারণে সে স্পিচ দিতে রাজি না। দুই চরিত্রটাই স্টুডেন্ট লাইফে ঘনিষ্ঠতা আর প্রতিযোগীতার।
এখানেই তিশা ও পার্ণ মিত্রের স্মৃতিচারণে পুরো ঘটনাগুলো দেখানো হয়। আপনাকে অবশ্যই স্ক্রিনের পাশে ভেসে ওঠা স্থান আর সন উল্লেখ করা লেখার দিকে ভালো ভাবে তাকাতে হবে। আর ঘটনাগুলো ঘটবে হঠাৎ হঠাৎ। এই আপনি ১৯৯০ সালের জাভেদ আর মায়ার পালিয়ে বিয়ে করা দেখলেন, একটু পরেই দেখবেন তাদের মেয়ে মায়াকে শাড়ীর সাথে ম্যাচিং করে ব্লাউজ পছন্দ করে দিচ্ছে।

.
আপনি যদি মনে করেন গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ডের সাথে একান্ত (১৮+) সময় কাটাবেন আর মুভি দেখবেন, তাহলে এই সিনেমা আপনার না। আবার যদি আপনি গা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকবেন, নিশ্চিত আপনি ঘুমিয়ে যাবেন। আপনার স্নায়ু গুলোকে দিয়ে একটু দ্রুত কাজ করাতে হবে। ক্যামেরা পরিচালনা যথেষ্ট ভালো, সেই সাথে সাউন্ড কোয়ালিটি। দৃশ্যগুলো ছিলো দেখার মত। রোকেয়া প্রাচী কিংবা তিশার অভিনয়ের তুলনা করা যাবে না। ইরফানের বাংলায় কিছুটা জড়তা (উত্তেজিত অবস্থায় বাংলা বলতে না পারা)। ইরফানের অভিনয় আসলেই দেখার মত, যথেষ্ট গুনি শিল্পী এবং সেই সাথে স্মার্ট। ইরফানকে দেখার সময় আমি বারবার শহিদুজ্জামান সেলিমকে কল্পনা করেছিলাম। বান্দরবনে বসে যখন ইরফান রোকেয়া প্রাচীর পাশে বসে বারবার যখন ২০ বছর আগে তাদের পালিয়ে বিয়ে করার কথাগুলো বলছিলো, "তোমার মনে আছে, তোমার বাবা আমাদের খুঁজতে এখানে সেখানে দৌড়াদৌড়ি করছিলো, তখন আমরা তোমাদের বাসাতেই ফুলশয্যা করছিলাম?"। তখন রোকেয়া প্রাচী ইরফানকে থামতে বলে, ওই সময়টায় ইরফানের যে ভঙ্গিটা ছিলো সেটা দেখার জন্য হলেও আরেকবার সিনেমা হলে যেতে চাই।
.
প্রথম অর্ধ দেখে মনে হয়েছিলো একদেড় মিনিটের অনেকগুলো ভিডিও ক্লিপ একসাথে জোড়াতালি দিয়ে কোন রকম একটা জগাখিচুরী বানাইছে। মুভি মানেই দর্শক যে কোন একটা চরিত্রের ভিতরে ঢুকে যাবে। কিন্তু এতটাই কাটাছেঁড়া যে, কখনো সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বিটিভিতে সিনেমা দেখার সময় বাজার থেকে ব্যাটারী ভাড়া নিয়ে আসতাম, কারেন্ট গেলে যেন কোন অংশ মিস না হয়। কিন্তু ডুব দেখেতে গিয়ে যদি আপনি আধাঘন্টা টয়লেটে বসে কাটিয়ে দেন, আপনার মনে কোন আপসুস থাকবে না। দর্শককে ধরে রাখতে পরিচালক সম্পুর্ণ ব্যর্থ। বিরতির পরের অংশ দেখে মনে হয়েছে, পরিচালক অনেকটা বিরক্ত নিয়েই নির্মাণ কাজ শেষ করছে।
: ওই রোল কয়টা বাকি?
- জ্বী স্যার, ৫ টা বাকী।
: ৩টা বাদ দিয়ে দে, কোনরকম ২ টা করে আজকের মত কাজ শেষ কর।
ঠিক এমনটাই মনে হয়েছিলো
.
.
মুভি সম্পর্কে যে কথাগুলো বলেছি তা সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত। ওভারঅল মুভিটা আমার ভালো লেগেছে, হয়তো যতটা প্রত্যাশা করেছিলাম ততটা ভালো হয়নি।
শেষের দিকে একটা কথা বলছি-
আমার এই লেখাটা অগোছালো মনে হচ্ছে?
- জ্বী, ডুব সিনেমাটাও এমনটাই অগোছালো।
পাঠক ধরে রাখার মত না হলেও লেখাটা কিন্তু আপনি পড়েছেন।
- ডুবের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই।
এই পোষ্টটা আপনি একবার পড়ছেন। যেটাতে আপনি কখনো হেসেছেন, কখনো একটা লাইন নিয়ে ভাবার চেষ্টা করেছেন, কখনো বা skip করে পরের লাইনে যেতে চেয়েছেন।
- ডুবের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই।
লেখাটা যেমনই হোক, উপরের কথাগুলো কিন্তু আপনার আর মনে নেই। যতক্ষন পড়ছেন, ততক্ষন পড়ছেন। পড়া শেষ, যা পড়ছিলেন তা সব ভুলে গেছেন।
- ডুবের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই, যতক্ষন দেখবেন মনে হয়না খারাপ লাগবে, কিন্তু হল থেকে বের হওয়ার পরে আপনার আর কিছুই মনে থাকবে না।