মুভি রিভিউ (হালদা, বাংলা)

"পয়সাওয়ালারা গরীবের মেয়ে বিয়ে করে কেন জানো? তারা বউকে দেখতে চায় পরীর মত, কাজ করবে দাসী-বান্দির মত"।
.
সিনেমার ঠিক মাঝামাঝি অংশে এরকম একটা কথা শোনা যায়। প্রথম বউয়ের বাচ্চা হয় না বলে আবার বিয়ে করে। নতুন বউয়ের জন্য সুন্দর করে বাসর ঘর সাজায় আগের বউ। আগের বউয়ের মুখেই উপরের কথাটা শোনা যায়।

.
চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি এলাকার একটা নদীর নাম হালদা, এশিয়ার মধ্যে একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র নামে পরিচিত। কিন্তু ইটের ভাটার বর্জ্য, তামাক কারখানার বর্জ্য আর সেই সাথে অপরিকল্পিত ভাবে নদী খনন, মাছগুলো ডিম ছাড়তে ভয় পায়। জেলাজীবন বিপন্ন, হালদাতে মাছ নেই। টাকার অভাবে নৌকা-জাল কিনে সাগরে যেতে পারছে না, সেই সাথে দস্যুদের আতঙ্ক তো আছে।
.
সিনেমার শুরুটায় হয় দস্যু আক্রমন দিয়ে। আস্তে আস্তে গভীর হতে থাকে। ফজলুর রহমান বাবুর অভিনয় নিয়ে কোন কথা বলার নেই। মোশাররফ করিমকে অনেকদিন পরে কমেডিটাইপ চরিত্র ছাড়া দেখলাম।
শুরুর দিকে গ্রাম্য এক বিয়েতে তিশাকে নাচতে দেখায়, তখন একটু সঙ্কিত ছিলাম। জেলের মেয়ের এত সুন্দর গেটআপ/মেকআপ কেন? কিন্তু না, পরের দিকগুলোতে ঠিকই মানানসই ছিলো সব কিছু।
.
ফজলুর রহমান বাবুর সাথে সাগরে মাঝ ধরতে গিয়ে দস্যুতের গুলিতে শংকর নামে একজন মারা যায়। শংকরের বাবা কানে কম শোনে, বাবু যখন শংকরের বাবার কাছে মৃত্যুর খবর দিতে আসে কিন্তু বাবু কিছুতেই তাকে বলতে পারছিলো, বাবুর গলা কাঁপতে ছিলো। এক পর্যায়ে বলেই ফেলে- শংকর মারা গেছে। কিন্তু শংকরের বাবা শুনতে পাচ্ছিলো না, নিজে নিজে বলতে ছিলো- শংকর কি আরও পরে আসবে? আমার ছেলেটা সবসময়ই দেরি করে।
জাহিদ হাসান বাচ্চার আশায় ২য় বিয়ে করে, কিন্তু দ্বিতীয় বউয়েরও বাচ্চা হচ্ছিলো না। তিশার বিয়ে হয়ে যাওয়ার কিছুদিন বাবার বাড়িতে আসে। সেখানে মেলামেশা হয় পূর্বের প্রেমিকের সাথে, তিশার গর্ভে বাচ্চা আসে। জাহিদ হাসান স্বামী বুঝতে পারছিলো বাচ্চার বাবা অন্য কেউ। আর দশ টা বাংলা সিনেমার মত হলে তিশার পেটে ৩/৪ টা বালিশ বেঁধে পেট বড় করে দেখানো হতো, কিন্তু হালদা সিনেমাতে পরিচালক এক কাজটি করেনি, বাস্তবতা ধরে রাখছেন।
পেটে ডিমওয়ালা মাছকে মা মাছ বলা হয়, জেলে সম্প্রদায় মা মাছ কখনো ধরে না। নিরঞ্জন নামে এক জেলে মা মাছ ভর্তি ব্যাগ মোশাররফ করিমের হাতে দেয়, চক্রান্ত হয় তাকে নিয়ে। মা মাছ ধরার অপরাধ দেখিয়ে তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেয়া হয়।
অনেকটা শেষের দিকে নিরঞ্জন মা মাছ ধরতে গিয়ে সাপের ছোবল খায়, অন্ধকার থাকায় বুঝতে পারেনি। নিরঞ্জন ছিলো শংকরের ভাই। সে যখন বাড়িতে আসে, তার বাবা (কানে কম শোনে) বলে- কি? শংকর আসবে নাকি? ওর জন্য বড় মাছ আনছো?
(যদিও সমস্ত কথাবার্তা চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ির আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয়)
.
অনেক কিছুই তো বলে দিলাম, নাহ আর বলা ঠিক হবে না। মুভি রিভিউ আসলে আমাকে দিয়ে সম্ভব না। আমি রিভিউও দিচ্ছি না, গতকাল মুভিটা দেখলাম, ভালো লাগলো, তাই লিখলাম। পিন্টু ঘোষের পরিচালনায় গানগুলো ছিলো মনে লাগার মত, আমি যদিও চিরকুট ব্যান্ডের সুমিকে মিস করছিলাম।
হালদাতে যদি আমাকে নাম্বার দিতে বলে তবে আমি ৮/১০ দিবো। আর যদি চরিত্রগুলোতে দিতে বলে তবে আমি রুনা খান (জাহিদ হাসানের প্রথম বউ) ১০/১০ দিবো। এই চরিত্রটা আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তিশাকে সে ভালোভাবেই গ্রহণ করে। আবার সংসারের কর্তৃত্বের লোভে তিশাকে পালিয়ে যেতে বুদ্ধি দেয়। কখনো দাসী ভাব নেয়, কখনো রাজরানী। তিশাকে ধুতরা ফুল খাইয়ে পাগল বানানোর চেষ্টাও করে, আবার ...আবার ... আবার.. না কিছু না, এই চরিত্রটা কাহিনীর প্রয়োজন বারবার বিভিন্ন দিকে টার্ন নিচ্ছিলো। পরিচালক এই দিক থেকে সফল, কোন চরিত্রই স্থির ছিলো না।
কাওয়ালী গান, পালা গান, গ্রাম্য সমাজ, পয়সাওয়ালাদের শোষন সব মিলিয়ে বাস্তব চিত্র, কোন নাটকীয়তা ছিলো না।