স্বপ্ন কখনো শেষ হয় না, জাস্ট স্বপ্নটা ঘুরিয়ে দেখতে হয় (এইচএসসি রেজাল্ট-২০১৮)

একটা জনপ্রিয় স্লোগান হচ্ছে-
"মানুষ বাঁচে আশায়, দেশ বাঁচে ভালোবাসায়"।
ভালোবাসা কিংবা দেশপ্রেম নিয়ে কথা বলছি না, আজ বলবো আশা নিয়ে। আশা মানের প্রত্যাশা। আর প্রত্যাশা কিংবা আশার জন্ম হয় স্বপ্ন থেকে।

আমি সবসময়ই নিজের যুক্তি কিংবা নিজের মনের উপর নির্ভর করে চলি। এজন্য গায়ে স্বার্থপর ট্যাগটা খুব ভালো করে লেগে আছে। আপনি যদি এখন চিন্তা করেন
কয়দিন পরে আপনি ৫০  হাজার টাকা হলে আপনি একটা দামী মোবাইল কিনবেন, তাহলে সেটা আমার কাছে স্বপ্ন। আর যদি টাকা হয়ে যায়, তখন মোবাইল কেনাটা আপনার কাছে আশা। আবার যদি চিন্তা করেন আপনার বাবা আপনাকে জন্মদিনে একটা ল্যাপটপ গিফট করবে, তাহলে সেটা স্বপ্ন। আবার যদি চিন্তা করেন বাবাবে ল্যাপটপ কিনে দিতে বলবেন, আর বাবা কিনে দিবে। তাহলে সেটা আশা।
কথাগুলো কিন্তু আমার নিজস্ব মতামত। ভুল হলেও আমি বেশিরভাগ সময়ই আমার মতামতের উপর নির্ভর করে চলি। যদি মনে করে আজ হাতিরঝিল যাবো, কেউ যদি বলে আজ গেলে বৃষ্টিতে ভেজা লাগবে। আমার যুক্তি হচ্ছে, ভিজতে হলে ভিজবো, আমি যাওয়ার কথা চিন্তা করছি, যাবোই।
.
আমি একটা মেয়েকে চিনি, এসএসসি তে এ+, কিন্তু এইচএসসিতে ১ বিষয়ে ফেল। বোর্ডে রিভিউ এর জন্য আবেদন করা হয়, সেখানেও ফেল আসে। শিক্ষাবোর্ডে দৌড়াদৌড়ির ফলে পরিচয় হয় অসৎ ব্যক্তি সাথে, সেই অসৎ ব্যক্তির প্ররোচনায় অনেক টাকার বিনিময়ে তৈরি করে জাল সার্টিফিকেট। বোর্ডের বিশেষ সুপারিশের (জাল) মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভর্তি হয় দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তির ১ বছর পরে শুরু হয় ঝড়। বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট দাখিল করতে গিয়ে জাল প্রমানিত হয়, মুহুর্তের মধ্যে ভর্তি বাতিল হয়ে যায়। এতদিনে সব শেষ।
ভর্তি শেষ, উচ্চ মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ, আশা শেষ। শুধু টিকে আছে স্বপ্ন। আর স্বপ্ন পূরণে মেয়েটা আবার ভর্তি হয় উচ্চ মাধ্যমিকে, যেটাকে ইন্টারমেডিয়েট বলি।
.
মেয়েটার আমার ফ্রেন্ডলিষ্টে আছে, এই পোষ্টও মেয়েটার চোখে পরবে। লাইক দিয়ে ইনবক্সে বলবে-
ভাইয়া, আমি এখনো স্বপ্ন দেখছি, চেষ্টা করছি ঘুরে দাড়ানোর।
.
মেয়েটাকে আমি অনেক শক্ত মনের বলবো। ওর জায়গায় হলে আমি হয় লেখাপড়া ছেড়ে দিতাম, না হলে পৃথিবী ছেড়ে দিতাম। পৃথিবী ছেড়ে দেয়া মানে আত্মহত্যা করতাম। আর একটা মানুষ কখন আত্মহত্যা করে?
যখন তার স্বপ্ন এবং আশা দুইটাই শেষ হয়ে যায়।
.
প্রতিটা মানুষ স্বপ্ন দেখে, পৃথিবীতে মানুষ তার সময়ের একটা বড় অংশ ব্যয় করে স্বপ্ন দেখতে দেখতে। আগামীকাল যাদের এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে, তারাও স্বপ্ন নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে, পরীক্ষা শেষে তারাও প্রচন্ড আশা নিয়ে ভালো রেজাল্ট প্রত্যাশা করছে।
কিন্তু রেজাল্ট ভালো না হলে?
রেজাল্ট খারাপ হতেই পারে। একটা পরীক্ষার রেজাল্ট কি জীবনের চেয়ে বড় হতে পারে? কিংবা একটা রেজাল্ট কিভাবে আপনার/তোমার জীবনের মাপকাঠি হতে পারে? একটা রেজাল্ট কিভাবে তোমার বাঁচা মরা নির্ভর করবে? একটা রেজাল্টের এতটা ক্ষমতা কিভাবে হলো?
একটা রেজাল্ট খুব বেশি হলে তোমার আশা নষ্ট করে দিতে পারে, স্বপ্ন না।
রেজাল্ট খারাপ হলে স্বপ্নটাকে একটু লেট করাও, কিংবা একটু ঘুরিয়ে স্বপ্ন দেখো। স্বপ্ন বাদ দেয়া যাবে না।
.
তু্মি ফেল করলে প্রতিবেশীরা কিছু বলবে। আরে ওই প্রতিবেশী কোনদিন তোমার পড়ার খোঁজ নিয়েছে? ওই তাদের মধ্যে কেউ কি কোনদিন তোমার বাবাকে বলছে- "আপনার ছেলের ফর্ম ফিলাপের টাকা লাগেলে আমার থেকে নিয়েন"।
তাহলে এই ধরনের লোকদের এতটা গুরুত্ব দেয়ার কি আছে। বলবে, শুনবে। জাস্ট ও পর্যন্তই। মানুষের কান দুইটা, এই জাতীয় ক্ষেত্রে এক কান দিয়ে শুনবে, অন্য কান দিয়ে বের করে দিবে। আর স্বপ্নটা ঘুরিয়ে দিয়ে আবার স্বপ্ন দেখতে থাকবে।
.
একটা মানুষ  শুধু নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে পৃথিবীতে আসে না। শুধু পৃথিবী থেকে নিলেই হবে না, পৃথিবীকে কিছু দিতে হবে। তোমার কি মনে হয়, তুমি ফেল করবো বলে পৃথিবী তোমার কাছে প্রত্যাশা বন্ধ করে দিবে?
একদম না। তুমি ভালো কিছু করো কিংবা খারাপ কিছু, পৃথিবীর প্রতি তোমার একটা কর্তৃব্য আছে। আর যদি তুমি শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবো, তাহলে পৃথিবীতে তোমার কোন প্রয়োজন নেই, তুই আত্মহত্যা করতে পারো।
আর সে জন্য তোমাকে রেজাল্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না, এখনি আত্মহত্যা করতে পারো, করে, করে ফেলো, কুইক।
.
যদি ভেবে থাকো তুমি ভালো রেজাল্ট করলে পৃথিবীকে কিছু দিবে, তাহলে বলছি পৃথিবীকে কিছু দিতে হলে সেটা পরীক্ষার রেজাল্টের উপর নির্ভর করে না। ফেল করেও তুমি পৃথিবীকে ভালো কিছু দিতে পারবে। পৃথিবীতে তুমি একবারই এসেছো, চলে যাওয়া মানে শেষ। স্বপ্ন নষ্ট করো না, টার্গেট ঠিক রাখো, রেজাল্ট খারাপ হলে স্বপ্নটা ঘুরিয়ে দেখো। পৃথিবীতে তোমাকে খুব বেশি প্রয়োজন।