ভবঘুরে ।। পর্ব-৯ ।।

সপ্তাহে ১ টা দিন ছুটি। ছুটির দিন বললে ভুল হবে, বলতে হবে সপ্তাহে একটা দিন দ্বিগুন পরিশ্রমের দিন। অফিস ডে গুলো রুটিন মাফিক কাজ করতে হয়, কিন্তু শুক্রবারটা সম্পূর্ণ নিয়মিত রুটিনের বাইরে। বাসার এটা সেটা কাজ তো থাকেই, তার উপর বাইরের কাজ। আত্মীয় স্বজন থেকে বন্ধবান্ধব, সব মিলিয়ে গুলিয়ে ফেলে নিজেকে সময় দেয়ার মত সময় থাকে না। ছুটির দিনটা আমাদের মত ভবঘুরেদের জন্য সবচেয়ে প্রিয় কিছুর একটা। কোন ধরাবাঁধা থাকে না, মন মত ছুটা যায়। আর মন মত ঘুরতে হলে বাকীদিন গুলো ভুলে ঘুরতে হবে। এইদিক থেকে নিজেকে সবসময় স্বার্থক মনে করি। আমি ছুটে চললে কর্ম ব্যস্তদিন কিংবা আগামীকাল আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে তার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারি।
.
ঘুম ভাঙ্গে পাখি ডাকা ভোরে। পাখি ডাকা ভোর বলা হলেও এই ঢাকায় পাখির ডাক শুনতে চাওয়াটা সবচেয়ে বড় বিলাসিতার একটা। যদি ডাস্টবিনের কাছাকাছি এলাকায় হাঁটেন তাহলে আপনার কাছে কাক ডাকা ভোর মনে হবে।
সকাল একবার পানির বোতলে পানি আর ব্যাগ রেডি করে ভাবলাম বের হবো। কিন্তু কেন জানি মনে হলো শরীরটা আজ বেইমানি করছে। রুমে কেউ নাই। শুয়ে পরলাম, লাইট জ্বালিয়ে। রাতের অন্ধকারটা খুব প্রিয় হলেও দিনের অন্ধকারে কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে যায়। বিছানার উপরে মাঝ বরাবর দড়িতে কাপড় ঝুলিয়ে রাখা ব্যাচলরদের বাসার একটা ঐতিহ্য। আর এ ঐতিহ্য আমিও ধরে খাছি। শুয়ে শুয়ে কাপড় গুলো দেখছি। প্রতিটা কাপড়েই কোন না কোন স্মৃতি ঘিরে আছে। কোনটা কারো থেকে গিফট, কোনটা পুরষ্কারের কিংবা কোনটা গায়ে জড়িয়ে বিশেষ কোথায় কিংবা বিশেষ কারো সাথে রিক্সা শেয়ার।
ঝুলানো একটা শার্ট দেখে হাসতে শুরু করলাম। শার্টের উপরের দিকের প্রথম দুইটা বুতাম ছেঁড়া। উপরের দিকে একটা বা দুইটা বুতাম খুলে রাখাটা নীলার খুব অপছন্দের। এটা নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হতো। ওর সামনে গেলে ইচ্ছা করেই এক দুই টা বুতাম খুলে রাখতাম। ওর ধারনা ছিলো রাস্তায় হাঁটার সময় মেয়েরা যেন আমার দিকে তাকায় সেজন্য আমি বুতাম খোলা রাখি। একবার ওর সামনে দাড়িয়ে ছিলাম, একটা বুতাম খোলা ছিলো।
এটা খোলা কেন? বলতে বলতে বুতামটা লাগিয়ে দিলো। বললাম, গরম লাগছে তো।
একটু চুপ হয়ে গেলো, স্বজোরে টান দিয়ে উপরের দিকের দুইটা বুতাম সহ শার্টটাই ছিঁড়ে দিলো। বললো, হুম, এখন আর গরম লাগবে না।
ওইদিনটা একটু আলাদা ছিলো, ওইদিন আমাদের প্রথম একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা হয় হাত ধরে।
.
হাঁটতে হাঁটতে নীলা চুল ছেড়ে দেয়। একটু যাওয়ার পরে নীলা হাত ধরে আবার পেছনে টানে। চুল ছেড়ে দেয়ার সময় ওর মাথার ব্যান্টটা খুলে পরে যায়। ব্যান্টটা ওর খুব প্রিয়, কোন ভাবেই সে ওটা হারাতে চায় না। রাস্তাটা নির্জন হওয়ায় খুঁজে পেতে কষ্ট হলো না।
পাষ্টিকের ব্যান্ট, দেখেই লোভ লাগলো। সুন্দর কিংবা দামী সে কারনে না, নীলার খুব প্রিয় বলেই লোভ লাগলো।
.
ড্রয়ার খুলে ল্যাপটপ বের করলাম। পাশেই ব্যান্টটা রাখা ছিলো। হাতে নিলাম। ল্যাপটপ চালু করে রাখলাম কি-বোর্ডের উপরে। নীল রঙ্গের আড়ালে যেমন ওর আসল নামটা হারিয়ে গেছে, তেমনি আমার থেকেও ও হারিয়ে গেছে। না বলে ব্যান্টটা আনার কারণে একদিন বেশ ঝগড়া হয়েছিলো। মাঝ রাতে ফোনে ফিসফিস করে ঝগড়া।